বৈশাখে ইলিশ আর ভর্তা না হলে কি চলে! পান্তার সঙ্গে এই দুই পদ চাই-ই
চাই। তাই রন্ধন শিল্পী আনার সোহেল দিয়েছেন ইলিশ আর ভর্তার কিছু অন্য রকম
রেসিপি। সঙ্গে দই দিয়ে তৈরি দুটি পদ।
নারিকেল-দুধে ইলিশ
নারিকেল-দুধে ইলিশ
উপকরণ:
ইলিশ মাছ ৫-৬ টুকরা। দই ২-৩ টেবিল-চামচ। নারিকেল দুধ ১ কাপ। লবণ
পরিমাণমতো। জিরাগুঁড়া আধা চা-চামচ। হলুদগুঁড়া আধা চা-চামচের চেয়েও কম।
কাঁচামরিচ-বাটা ১ চা-চামচ বা প্রয়োজনমতো। পেঁয়াজকুচি ১টি। আদাবাটা ১
চা-চামচ। পেঁয়াজবাটা ১ চা-চামচ। ধনেপাতা ২ টেবিল-চামচ। কাঁচামরিচ ২-৩টি।
পদ্ধতি:
প্রথমে মাছ হলুদ ও লবণ দিয়ে ধুয়ে নিন। এখন পেঁয়াজকুচি, বাটাপেঁয়াজ,
আদাবাটা ও কাঁচামরিচ ছাড়া বাকি উপকরণ দিয়ে মাছ মাখিয়ে রাখবেন কিছুক্ষণ।
এবার
প্যানে তেল ৩ টেবিল-চামচ গরম করে পেঁয়াজকুচি দিন। পেঁয়াজ হালকা বাদামি হয়ে
আসলে আদাবাটা, পেঁয়াজবাটা দিয়ে কয়েক সেকেন্ড নেড়ে মাখানো মাছগুলো প্যানে
সাজিয়ে বসান এবং মসলাগুলো উপরে ঢেলে দিন। হালকা ভাবে নেড়ে ঢেকে রান্না করুন
২০-২৫ মিনিট। একটু মাখা মাখা হয়ে আসলে ধনেপাতার কুচি ও কাঁচামরিচ ছড়িয়ে
দিয়ে কয়েক সেকেন্ড পর নামিয়ে নিন।
ইলিশ মাছের ভর্তা
উপকরণ:
ইলিশ মাছের পেটি বা মোটা অংশ ৪-৫ টুকরা। লবণ পরিমাণমতো। হলুদগুঁড়া অল্প।
মরিচগুঁড়া অল্প। সরিষার তেল প্রয়োজনমতো। ধনেপাতার কুচি ২ টেবিল-চামচ।
কাঁচামরিচ বা শুকনামরিচ তেলে টেলে নেওয়া ৪-৫টি। পেঁয়াজকুচি ১টি। ভাজা
জিরাগুঁড়া অল্প।
পদ্ধতি:
প্রথমে মাছে হলুদ, মরিচগুঁড়া ও লবণ দিয়ে মেখে সরিষার তেল ১ টেবিল-চামচ
দিয়ে বাদামি করে ভেজে নিন। এখন বাকি উপকরণগুলো কেটে পাশে রাখুন। তারপর
মাছের কাঁটা বেছে নিন।
একটি বাটিতে কাঁটা ছাড়ানো মাছ নিয়ে একে একে সব উপকরণ নিন এবং একসঙ্গে মেখে নিন। হয়ে গেল ইলিশ ভর্তা।
লইট্টা শুটকি ভর্তা
উপকরণ:
লইট্টা শুঁটকি ২৫ গ্রাম। কাঁচামরিচ বা শুকনামরিচ ৩-৪টি (ঝাল নিজের মতো করে
নিন)। লবণ পরিমাণমতো। পেঁয়াজকুচি ১টি। ধনেপাতার কুচি ২ টেবিল-চামচ। সরিষার
তেল ২ টেবিল-চামচ।
পদ্ধতি:
প্রথমে শুঁটকি ছোট করে কেটে একটু টেলে নিন। তারপর গরম পানিতে ভিজিয়ে রাখুন
নরম হওয়া পর্যন্ত। ভালো করে ধুয়ে নিন যেন কোনো বালি না থাকে। এবার কাঁটা
বেছে নিন।
একটি
প্যানে অল্প তেল গরম করে রসুন দিয়ে আগে নেড়ে তারপর পেঁয়াজকুচি দিয়ে
কিছুক্ষণ নাড়ুন এবং শুটকি দিয়ে দিন। লবণ দিয়ে ঢেকে মাঝারি আঁচে দুই থেতে
তিন মিনিট রান্না করুন।
এবার
টালা মরিচ ও ধনেপাতার কুচি দিয়ে মিহি করে পাটায় পিষে নিন বা ব্লেন্ড করে
নিন। সেটা বাটিতে নিয়ে সরিষার তেল দিয়ে সবসহ ভালো করে একবার মাখিয়ে নিন।
ব্যাস হয়ে গেল মজাদার লইট্টা শুটকি ভর্তা
দই বড়া
উপকরণ:
মাষকলাইয়ের ডাল ১ কাপ। আদাবাটা ১ চা-চামচ। লবণ ১ চা-চামচ। বিট লবণ ১
চা-চামচ। তেতুলের কাঁথ আধা কাপ। চিনি বা গুড় ২ টেবিল-চামচ। দই ২ কাপ
(ফেটানো)। চাটমসলা ১ চা-চামচ।
শুকনা টালা গুঁড়ামসলার জন্য: শুকনা লালমরিচ টালা ৪টি। জিরা টালা ৩ চা-চামচ। এগুলো টেলে আলাদা আলাদা গুঁড়া করে রাখুন।
আরও লাগবে: পুদিনাপাতা, কাঁচামরিচের কুচি, পেঁয়াজকুচি সাজানোর জন্য। সব নিয়ে পাশে রাখুন। সঙ্গে ভাজা নিমকি ভেঙে দিতে পারেন।
পদ্ধতি:
প্রথমে মাষকলাইয়ের ডাল রাত্রে ভিজিয়ে রাখুন বা তৈরির আগে পাঁচ থেতে ছয়
ঘণ্টা ভিজিয়ে রাখতে হবে। তারপর ধুয়ে আধা কাপের চেয়েও কম পানি দিয়ে মিহি
পেস্ট করে নিন। যেন থকথকে খামিরের মতো হয়।
একটি
বাটিতে পানি নিয়ে ছোট একটি ডালের বড়ি ফেলে দেখে নিন, খামির ঠিক হয়েছে
কিনা। ভেসে উঠলে মনে করবেন খামির একদম ঠিক হয়েছে। এবার ডালের সঙ্গে আদাবাটা
ও অল্প লবণ দিয়ে মিশিয়ে রেখে দিন ১০ মিনিট। এবার চুলার একদিকে তেল গরম
করতে দিন। এই ফাঁকে একটি বড় বাটিতে ৩ কাপ পানি নিয়ে তাতে অল্প লবণ ও
তেতুলের কাঁথ দিয়ে গুলে রাখুন।
তেল
গরম হলে মাঝারি আঁচে রাখুন জ্বালটা। এখন ডালের খামির ছোট এক চামচ নিয়ে
বড়ার মতো করে নিয়ে গরম তেলে ছেড়ে দিন। বাদামি করে ভেজে তুলুন আর সঙ্গে
সঙ্গে পাশে তৈরি করে রাখা তেঁতুলপানিতে দিন বড়াগুলো। এতে বড়াগুলো নরম নরম
থাকবে আর স্বাদটাও ভালো হবে।
বড়াগুলো থেকে পানি চেপে বের করে পরিবেশন পাত্রে সাজিয়ে রাখুন।
এখন
অন্য একটি বাটিতে দই ফেটে নিন। তারপর টালা মসলা থেকে এক চামচ করে
মরিচগুঁড়া ও জিরাগুঁড়া, তেঁতুলের কাঁথ, বিট লবণ, চিনি, অল্প চাটমসলা দিয়ে
আবার দই ফেটে নিন।
এখন পরিবেশন।
ডালের
বড়ার ওপর ফেটানো দই ঢেলে দিন। তারপর টালা গুঁড়ামসলা অল্প ছিটিয়ে দিয়ে উপরে
চাটমসলা ছিটান। পুদিনাপাতার কুচি, কাঁচামরিচের কুচি, পেঁয়াজকুচি, নিমকি
ভেঙে দিয়ে দই বড়া পরিবেশন করুন।
দই ফল
উপকরণ: দই দেড় কাপ। চিনির সিরা ২ কাপ বা যতটুকু প্রয়োজন হবে। কয়েক রকমের ফল (কলা, কিউই, আম, আপেল, আঙুর) কিউব করে কাটা।
পদ্ধতি:
প্রথমে সিরাপ তৈরি করে নিন। চিনি এক কাপ ও দুই কাপ পানি দিয়ে জ্বাল দিন
এবং দুতিনবার ফুটে আসার পর নামিয়ে নিন। হালকা ঘন সিরাপ হবে। যা দইয়ে গুলে
যাবে।
এবার
সব ফল ধুয়ে কেটে নিন এবং দুতিন টেবিল-চামচ সিরা দিয়ে মিশিয়ে রেখে দিন
একপাশে। একটি বাটিতে দই নিন এবং ঠাণ্ডাচিনির সিরা দিয়ে ফেটে নিন দইটা ভালো
করে।
এখন
পরিবেশন গ্লাস বা বাটিতে প্রথমে কিছু ফল দিন। তারপর দইয়ের মিশ্রণ দিন। তার
উপরে আবার ফল সাজিয়ে দিন। ব্যাস হয়ে গেল ঝটপট মজাদার দই ফল। এবার ঠাণ্ডা
ঠাণ্ডা পরিবেশন করুন।
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন